জাহান্নাম ধ্বংসের ঘর
বান্দার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জন ও কৃতকার্য হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে, তার অন্তকরণ আখেরাতের স্মরন, পরকালের ভাবনায় সঞ্জীবিত ও সিক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নৈকট্য-প্রাপ্ত বান্দা তথা অলি-আউলিয়াদের প্রশংসা করে বলেন: “আমি তাদেরকে এক বিশেষগুন তথা পরকালের স্মরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র প্রদান করেছি।” অর্থাৎ পরকালীন জীবনের সুখ-দুঃখের ভাবনা। পক্ষান্তরে পরকাল বিস্মৃতি ও আখেরাত ভুলে যাওয়া বান্দার ভাগ্যহীন হওয়ার আলামত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। অতএব আমি আজকে তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা এ দিনের সাক্ষ্যাৎ ভুলে গিয়েছিল, (আরেকটি কারণ) যেহেতু তারা আয়াত সমূহকে মিথ্যারোপ করত।”
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, খাস রহমতঃ আমাদের অন্তরে পরকালের ভাবনা, আখেরাতের ফিকির উদয়-বৃদ্ধির জন্য হাজারো আলামত, প্রচুর নিদর্শন বিদ্যামান রেখেছেন এ পার্থিব জগতে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমারা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি? আমিই সে বৃক্ষকে করেছি স্মরনিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।” যদিও এ বৃক্ষ গরমের উপকরণ, রান্নার ইন্দন, তথাপি আমাদেরকে আখেরাতের অগ্নি স্মরণ করিয়ে দেওয়ারও স্মরনিকা। নিম্নোক্ত আয়াতের দ্বারা তিনি গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমকে জাহান্নমের অগ্নির সাথে তুলনা করে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছেঃ “তারা বলেছে এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত।” আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলতেন: “তোমরা জোহরকে থান্ডা করে পড়, যেহেতু গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে উৎসারিত।”
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন: “জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করেছে, হে আমার রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে নিচ্ছে; অতঃপর আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুমতি দেন। একটি গ্রীষ্মকালে অপরটি শীতকালে। তোমরা যে প্রচন্ড গরম ও কনকনে শীত অনুভব কর, তাই সে নিঃশ্বাস।”
রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে সাহাবাদের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উপদেশ বাণী প্রদান করতেন, যার দ্বারা অন্তর বিগলিত হত, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে যেত চক্ষুদ্বয়। একবার তিনি নামাজ আদায় করে বলেন:
“এ মাত্র যখন আমি তোমাদের নিয়ে নামাজরত ছিলাম দেয়ালের পাশে প্রতিবিম্বের আকৃতিতে আমাকে জান্নাত-জাহান্নাম দর্শন করানো হয়েছে। আজকের মত আর কোন দিন এতো মঙ্গল-অমঙ্গল, নিষ্ট-অনিষ্ট চোখে দেখিনি। রাসূল (সাঃ) এর কথা শুনে সাহাবাগণ অবনত মস্তক হয়ে গেলেন, তাদের অন্তরে কান্নার ডেকুর উঠল। তারা কাঁদতে ছিলেন। অথচ তাকওয়া, ইমান, ইসলামের দাওয়াত, জিহাদ ও রাসূলকে নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে অধিক অগ্রগামী ছিলেন।
কারণ, এটা ভয়ংকর মাখলূখ (জাহান্নাম) সম্পর্কে সতর্কবাণী ও সাবধানিকরণ আগাম বার্তা। কেমন হবে সেদিন, যে দিন সত্তর হাজার লাগামসহ জামান্নাম উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি লাগামের সাথে একজন করে ফেরেশতা থাকবে, তারা এটাকে টেনে-হেছড়ে হাজির করবে। এতো বেশী পরিমাণ শক্তিশালী ফেরেশতাদের নিযুক্তি দ্বারাই জাহান্নামের বিশালত্ব ও ভয়াবহতার ধারণা করা যায়।
এরশাদ হচ্ছে: “যে দিন জাহান্নামকে আনা হবে, সে দিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে আসবে? আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী আমাদের কাছে আরো গভীর চিন্তার আবেদন জানায়ঃ
“এটা অট্রালিকা সাদৃশ বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে, যেন সে পীতবন্য উষ্ট্রশ্রেনী।” জাহান্নাম নিজ ক্রোধের কারণে ভিষণ হয়ে উঠবে, তার অংশগুলো খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে মহান আল্লাহর গোস্বার ধরুন। এরশাদ হচ্ছেঃ “অগ্নি যখন দূর থেকে তাদেরকে দেখবে, তখন তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও গুঙ্কার।”
বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্তুর ন্যায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যে কারণে জাহান্নামের নাম শুনে অন্তর সমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না, চক্ষু সমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না। যা সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র। যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন সতর্কবাণী আমরা শোনিনি। অথবা আমাদের অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর ও কঠিন হয়ে গেছে!
এরূপ কঠিন অন্তরই যে কোন ব্যক্তির হতভাগ্য হওয়ার বড় আলামত। এ ধরণের বধির, কল্যাণ শুন্য অন্তরসমূহ বিগলিত করার জন্যই জাহান্নামের অগ্নি প্রস্তুত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা ধ্বংস-অপমানের স্থান জাহান্নাম সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করে বলেছেনঃ “অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।”
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছেঃ “নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদ সমুহের অন্যতম। মানুষের জন্য সতর্ককারী।”
আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম থেকে ভয়ংকর কোন বস্তু নেই। খোদ আল্লাহ তাআলা এর প্রজ্বলন-দাহন, খাদ্য-পানীয়, বেড়ি, ফুটন্ত পানি, পুজ এবং তাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা ও সেখানকার পোশাকের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে মানবজাতি এ নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ পায় এই তো জাহান্নাম! এর অভ্যন্তরে জাহান্নামিরা কাত-চিত হয়ে পল্টি খাচ্ছে, এর ময়দানে তাদেরকে টানা-হেচড়া করা হচ্ছে। রাসূল (সাঃ)-ও এর ভয়াবহতার বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। একদিন মেম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করেনঃ
“আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি।” সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশে অবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতে পেয়েছিল। অস্থিরতার দরুন কাধের চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরো বলতে ছিলেনঃ “আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিস দেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত। জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিস দেখিনি, যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।”
হে মানবজাতি! মনে রেখ, জাহান্নাম সম্পর্কে তোমার অনুসন্ধিৎসা, মূলত একটি ভীতিকর বস্তু সম্পর্কেই অনুসন্ধিৎসা। লক্ষ্য কর, যার সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“যা দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে লাল হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বৎসর, যার ফলে সে সাদা হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে কালো হয়ে গেছে। সে বিদঘুটে কালো; অন্ধকার; তার এক অংশ অপর অংশকে ভস্ব করে দিচ্ছে।”
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “আমাদের এ আগুন, জাহান্নামের সত্তর ভাগের এক ভাগ।”
“জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে সে ব্যক্তির, যার দুটি আগুনের জুতো থাকবে, যার কারণে তার মস্তক টকবগ করবে, সে অন্য কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তি ভোগকারী মনে করবে না। অথচ সেই সবচেয়ে কম শাস্তি ভোগকারী। জাহান্নমের সাতটি দরজা রয়েছে। সব কটি দরজা লোহার খুটি দ্বারা আটঁকে দিয়ে জাহান্নামিদের বন্ধি করে রাখা হবে। এরশাদ হচেছঃ “নিশ্চয় তা’ (জাহান্নাম) তাদের ওপর বন্ধ করে দেয়া হবে। লম্বা লম্বা খুঁটিসমূহে।”
জাহান্নামের অনেক স্তর রয়েছে। ওপরের স্তর থেকে নিচের স্তরগুলো তুলনামূলক কঠিন ও ভয়াবহ।
এরশাদ হচ্ছে: “নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিন্ম স্তরে।”
জাহান্নামের গভীরতার পরিমাণ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “তার মুখ থেকে একটি বিরাট পাথর নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বৎসর পর্যন্ত গভীরে যেতে থাকবে, তবুও তার গভীরতার নাগাল পাবে না।” যখনই কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সে বলবে, আরো আছে কি? তবে নিশ্চিত আল্লাহ তাআলা নিজ ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নাম পূর্ণ করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমার রবের কথাই পূর্ণ হলঃ অবশ্যই আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করব, জিন ও মাবনজাতি দ্বারা।”
চরম শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে জাহান্নামিদের ভয়ংকর ও বিশাল আকৃতিতে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “একজন কাফেরের দুকাঁধের মাঝখানের ব্যবধান হবে দ্রুতগামী অশ্বারোহী ব্যক্তির তিন দিন ভ্রমন পথের সমান।”
“তার মাঢ়ির দাত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। তার চামড়ার ঘনত্বের প্রস্থ হবে তিন রাত ভ্রমন করার পথের সমান।”
“তার পাঁছা হবে মক্কা-মদিনার দূরত্বের সমান।” জাহান্নাম খুবই খারাপ গন্তব্য, ঘৃণীত বাসস্থান। এতে খাদ্য হিসেবে থাকবে বিষাক্ত কন্টক আর যাক্কুম। যা মারাত্বক কদর্য ও যন্ত্রনাদায়ক। এর সৃষ্টিকর্তা, যিনি এর দ্বারা শাস্তি দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন, তিনি নিজেই বলেছেনঃ “নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য। গলিত তন্ত্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে গরম পানি।”
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায় টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন-উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে, যার খাদ্যই হবে যাক্কুম”?
তাতে পান করার জন্য আছে, গরম টগবগে পানি, পুঁজ, গীসলীন অথাৎ জাহান্নামীদের গাঁ ধোয়া পানি, পূঁজ ও বমি।
এরশাদ হচ্ছেঃ “এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ-কাম হল। তাদের প্রত্যেকের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদের প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু অথচ সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।”
“যদি তারা ফরিয়াদ জানায়, তবে তাদেরকে এমন পানি দ্বারা জবাব দেয়া হবে, যা পুঁজের ন্যায়, যা তাদের মুখ-মন্ডল জ্বালিয়ে দিবে।” তাদের পেটে ক্ষুধার সৃষ্টি করা হবে, অতঃপর যখন তারা খানার ফরিয়াদ করবে, যাক্কুম খেতে দেয়া হবে, যা বক্ষণের ফলে পেটের ভেতর গরম পানির ন্যায় উতলানো শুরু করবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “অতঃপর তারা পানি চেয়ে ফরিয়াদ করবে, ফলে তাদেরকে এমন পানি দেয়া হবে, যা তাদের নিকটবর্তী করা হলে তাদের চেহারা জ্বলে যাবে।” আর যখন তা পান করবে, তখন তাদের নাড়ি-ভূড়ি খন্ড-বিখণ্ড হয়ে মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে যাবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “এবং তাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়ি-ভূঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”
আল্লাহ তাআলা তাদের পোশাকের ব্যাপারে বলেছেন, আলকাতরার এমন পোষাক পরিধান করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর দাহ্য হতে থাকবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের মুখ মন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।”
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ “যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হবে।”
ইবরাহিম তামিমি (রহ) এ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় বলতেন: “পবিত্র তিনি, যিনি আগুন দ্বারাও পোষাক তৈরি করেছেন।”
জাহান্নামের শিকল ও বেড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ “ধর তাকে; এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও তার গলায়; অতঃপর নিক্ষেপ কর তাকে জাহান্নামে; পুনরায় তাকে বেঁধে ফেল এমন শৃঙ্খলে, যার দৈর্ঘ সত্তর গজ লম্বা।” তাদের হাত গর্দানের সাথে বেঁধে দেয়া হবে এবং চেহারার ওপর দাঁড় করে টেনে-হেচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “যে দিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, (বলা হবে) জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদান কর।” কপাল-পা একসাথে বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “অতঃপর তাদের পাকঁড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে।” এ কপাল মিথ্যুক, আল্লাহর জন্য সেজদা করেনি, তার বড়ত্বের সামনে অবনত হয়নি। এ পদযুগলও মিথু্যক, সবসময় আল্লাহর অবাধ্যতায় চালিত হয়েছে।
জাহান্নামের আবহাওয়া বীষ; পানি টকবগে গরম; ছায়া ধুম্র কুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-ঠান্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা শোচনীয় পরাজয়ের, চুরান্ত অপমান জনক। তদুপরি তারা পাঁয়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান পিপাসায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরম্ভ হবে, অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “আগুন তাদের মুখ মন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।”
জাহান্নাম খুবই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল, ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সবসময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে, জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব, কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ংকর পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে অভ্যর্থনা দেয়া হবে। যাদের চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর, করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে লৌহদণ্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে, ধমকিয়ে ধমকিয়ে জাহান্নামিদের নিয়ে যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তার গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোষাক পরিধান করানো হবে, তাদের কোন ইচ্ছাই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে বাধাঁ হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার করবে আর মৃত্যুকে আহবান করতে থাকবে।
তাদের বলা হবেঃ “আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেক না, অনেক মৃত্যুকে ডাক।” তখন তারা নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার করবে, যে কারণে তারা আজ এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “এবং তারা বলবে, যদি আমরা কর্নপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না।” সবদিক থেকে জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে চাদর। আমি এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।” তারা যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছেঃ “নিশ্চয় ওর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।”
আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের বেষ্টনকারী।” কোথাও পালাবার জায়গা নেই।
এরশাদ হচ্ছেঃ “তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার হাতুড়ি সমূহ। যখনই তারা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে) দহনের শাস্তি আস্বাদন কর।”
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “যখন তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব। যেন তারা আযাব আস্বাদান করতে পারে।”
অতঃপর বলবেন: “তোমরা শাস্তি আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।” তারা জাহান্নামের ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “আর যারা জাহান্নামে রয়েছে, তারা জাহান্নামের রক্ষিদের বলবে, তোমরা তোমাদের রবকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে এক দিনের আযাব হালকা করে দেন। রক্ষীরা বলবেঃ তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তোমাদের রাসূলগণ আসেনি? তারা বলবেঃ অবশ্যই; তারা বলবেঃ তবে তোমরাই আহবান কর। বস্তুত কাফেরদের আহবান নিষ্ফল।”
একটু চিন্তা করুন, সে জগতের মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে, যারা সর্বশেষ ও চুরান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মৃত্যু কামনা করবে। এরশাদ হচ্ছেঃ “তারা (জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হে মালেক, (বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সা খতম করে দিন।”
ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ এক হাজার বৎসর পর তাদের কথার উত্তর খুব কঠোর ও ঘৃণিত ভাষায় দেয়া হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “সে বলবেঃ নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।” অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয় আভিযোগ উত্থাপন করবে এবং বলবেঃ “হে আমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকে পরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি। হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায় তা করি, তাবে আমরা নিশ্চিত অত্যাচারী।”
দুনিয়ার দ্বিগুন বয়স পরিমাণ চুপ থাকার পর আল্লাহ তাআলা বললেনঃ “আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, এবং আমার সাথে কোনো কথা বল না” এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য তাদের আচ্ছন্ন করে নিবে, তাদের হতাশা বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে তাদের গলার আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর, চিৎকার, আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্র ভেসে বেড়াবে। তবে সবচেয়ে বেশী দুঃখিত হবে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা আল্লাহর দীদার থেকে বঞ্চিত হয়ে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “কখনো না, তারা সেদিন তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। অতঃপর তারা নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” যখন তারা চিন্তা করবে অল্প দিনের ভোগ-বিলাস আর প্রবৃত্তের জন্য এ দুঃখ-দুর্দশা, অপমান-গঞ্জনা; তখন তাদের আফসোসের অন্ত থাকবে না, বরং শাস্তির ওপর এটাও আরেকটি শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে যে, আসমান-জমীন সমতুল্য জান্নাতের বিপরিতে সামান্য বিনিময়ে এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। যে সামান্য দুনিয়া নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে, যেন কখনো তার অস্তিত্ব ছিল না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে কালো মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ হলো মৃত্যু। এরপর তাকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মৃত্যু নেই। হে জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মৃত্যু নেই।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) তেলাওয়াত করলেনঃ “তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে না।” এ হলো জাহান্নাম ও জাহান্নামিদের অবস্থা।
আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করেঃ যাদুকরের নিকট যায়, যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করে।
এরশাদ হচ্ছে: “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগ্নি।”
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে: “আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না। তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি? যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে।
এরশাদ হচ্ছেঃ “তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে? তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।” ফজরের আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শ্রবন করে, “এসো নামাজের দিকে, এসো কল্যাণের দিকে” তারপরেও তারা ঘুম থেকে উঠে না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না! এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন