সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫

জাহান্নামের মানসিক শাস্তি


জাহান্নামের মানসিক শাস্তি

রেহনুমা বিনত আনিস
মোবাশের আহমেদ নোমান
জুন ১১, ২০১৩ ইং


দিন আগে এক আসরে জাহান্নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তারপর থেকে কেবল আলোচনাই মাথায় ঘুরছে আর ঘুরবেই না বা কেন যেখানে অনন্ত জীবনের আগেই শুরু হয়ে যায় জাহান্নামের শাস্তি? মৃত্যুর আগমূহূর্ত থেকেই জাহান্নামী ফেরেস্তাদের বিভৎস চেহারা দেখে বুঝতে পারে খবর খারাপ তার রূহ শরীরের আনাচে কানাচে দৌড়াতে থাকে, আর ফেরেস্তারা যতক্ষণ তার শরীরের ভিতর থেকে টেনে বের করেন, ততক্ষণে ক্ষতবিক্ষত রূহের অবস্থা দাঁড়ায় যেমন গরম লৌহ শলাকা গায়ের জোরে টেনে ছাড়ানো পশমের মত পুঁতিগন্ধময় এই রূহ ফেরেস্তারা না পেরে বহন করেন এক রুক্ষ চটসদৃশ্য নোংরা বস্তায়, এর ঘষায় ক্ষতবিক্ষত রূহের কি অবস্থা বলাই বাহুল্য কিন্তু মৃত্যু তো কেবল একবারই ঘটবে!
তাকে উপরের আসমানের দিকে নেয়ার সময় সব ফেরেস্তারাই নাক চেপে ধরে ঘৃণা প্রকাশ করেন সপ্তম আসমানে পৌঁছতেই তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয় পৃথিবীর দিকে বাতাসে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা বা মৃতভোজী পাখীর উচ্ছিষ্টের মত সে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছায় তার কবরে, তার দেহের কাছে কবরে পৌঁছতেই মুনকির নাকির ফেরেস্তাদ্বয় এসে জেরা করা শুরু করেন, কিন্তু সারাজীবন যে সে কিছুই বিশ্বাস করেনি বা পালন করেনি তার পক্ষে মস্তিষ্কের সাহায্য ব্যাতিরেকে মিথ্যা বলাও সম্ভব হয়না ফেরেস্তারা চলে গেলে তার কবর দুদিক থেকে সংকীর্ণ হয়ে এসে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করে যে বেচারার সমস্ত হাড়গোড় একত্রিত হয়ে যায়, তার কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে এবং সকাল বিকাল তাকে হবু চিরস্থায়ী বাসস্থান জাহান্নাম দেখানো হয়, তখন সে আরো সংখিত হয়
তো গেল কবরের কথা সূরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে যেদিন ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন সেদিন জাহান্নামীরা অচিরেই আল্লাহর সাথে মুখোমুখি হবার ভয়ে হায় হায় করে উঠবে, ‘তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণও সত্য বলেছিলেন’ (সুরা ইয়াসিনঃ আয়াত ৫২) অর্থাৎ, কিয়ামতের পরে যে শাস্তি অপেক্ষা করছে তার তুলনায় কবরের এই শাস্তি কিছুই নয়! অথচ আল্লাহ বলছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় (জাহান্নামে) পৌছবে না এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা
অতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব’ (সুর মারইয়ামঃ আয়াত ৭১-৭২)
সুতরাং ভালমন্দ সবাইকেই অন্তত একবার এই জায়গায় একবার দর্শন দিতে হবে এতে ভালদের মাঝে appreciation জন্মাবে তারা কি বাঁচা বেঁচেছে এবং কিসের পরিবর্তে কি পেয়েছে আর জালিমদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘এর (জাহান্নামের) সাতটি দরজা আছে প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে’ (সুরা হিজরঃ আয়াত ৪৪)
এদের মধ্যে সর্বনিন্ম স্তরে থাকবে ফিরআউন এবং মুনাফিকরা; অতঃপর মুশরিক, কাফির, ফাসিক এবং পাপীরা তাদের পাপের মাত্রা অনুযায়ী স্থান পাবে জাহান্নামের শাস্তি সমূহের বিশদ বর্ণনা রয়েছে কুরআন, হাদীস এবং বিভিন্ন কিতাবে
তবে আমি শারিরীক শাস্তির দিকে যাবো না আমার মনে হয় শারীরিক শাস্তির চেয়েও ভয়ানক কষ্ট মানসিক শাস্তি শরীরের কষ্ট একসময় সয়ে যায়, যেকোন ঘা একসময় ভরাট হয়ে আসে, আঘাতের দাগ একসময় মুছে যায় কিন্তু মনের কষ্ট দেখাও যায়না সওয়াও যায়না আর এই কষ্টই জাহান্নামের সবচেয়ে বড় শাস্তি
জাহান্নামের যত শাস্তির কথা বলা হয়েছে তারমধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মর্মবিদারী মনে হয়েছে এটি, সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে (সুরা আল মুতাফফিফিনঃ আয়াত ১৫-১৬)
ভালমন্দ নির্বিশেষে সবার আশা থাকে, পরম করুণাময় আল্লাহ- যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর প্রতিপালন করেছেন, অতঃপর বিচার করবেন- তাঁকে একনজর দেখার কিন্তু যারা আল্লাহ তায়ালাকে না দেখে বিশ্বাস করেনি তাদের তিনি কিয়ামতের দিনও তাঁর দর্শন থেকে বঞ্চিত করবেন কি মর্মন্তুদ এই শাস্তি! অথচ তখনো তারা জাহান্নামে প্রবেশ করেনি!
আর যখন তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন কি হবে? প্রথমত তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ চাইবে, তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দূর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি হে আমাদের পালনকর্তা! থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা গোনাহগার হব আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না(সুরা মুমিনূনঃ আয়াত ১০৬-১০৮)
আল্লাহ সুবিচারক, তাই তিনি অপরাধীদের দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়ে প্রথমবার যারা সততার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের প্রতি অবিচার করবেন না
অতঃপর তারা (জাহান্নামিরা) এই নিকৃষ্ট আবাসস্থল থেকে বেরোবার অন্য উপায় খুঁজবে কিন্তু, যখনই তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর (সুরা সাজদাঃ আয়াত ২০)
তখন জাহান্নামীদের পারস্পরিক কলহ শুরু হয়ে যাবে, অতঃপর দূর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম তোমরা এখন জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ আমাদের থেকে নিবৃত করবে কি? অহংকারীরা বলবে, আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ফয়সালা করে দিয়েছেন যারা জাহান্নামে আছে, তারা জাহান্নামের রক্ষীদেরকে বলবে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের আযাব লাঘব করে দেন রক্ষীরা বলবে, তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রসূল আসেননি? তারা বলবে হ্যাঁ রক্ষীরা বলবে, তবে তোমরাই দোয়া কর বস্তুতঃ কাফেরদের দোয়া নিস্ফলই হয় (সুরা মুমিনঃ আয়াত ৪৭-৫০) আমি ভাবি অহঙ্কারীদের তো অন্তত এটুকু সান্তনা থাকবে যে তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করছে, কিন্তু বোকা অনুসরণকারীরা নিজেদের কি বলে সান্তনা দেবে?
শেষপর্যন্ত জাহান্নামীরা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, তাদের এই পরিনতির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী যখন তাদের জিজ্ঞেস করা হবে কিভাবে তারা জাহান্নামে পৌঁছল, তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত (সুরা মুদ্দাসসিরঃ আয়াত ৪২-৪৭) কি মর্মান্তিক এই আত্মোপলব্ধি যে তারা নিজেরাই তাদের এই দুর্ভাগ্যের স্রষ্টা! এর ওপর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত জান্নাতীরা দোযখীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি? অতএব, তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবেঃ হ্যাঁ অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবেঃ আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর (সুরা আরাফঃ আয়াত ৪৪)
অথচ একদিন ক্ষমতার বলে এই জাহান্নামীরা এই জান্নাতীদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে, তাদের অত্যাচার নির্যাতন করেছে, তাদের সম্পদ জরপূর্বক দখল করেছে, তাদের প্রাণ পর্যন্ত হরণ করেছে! শাস্তির ভয়াবহতায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষপর্যন্ত তারা মৃত্যু কামনা করবে, যখন এক শিকলে কয়েকজন বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সেখানে তারা মৃত্যুকে ডাকবে বলা হবে, আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না অনেক মৃত্যুকে ডাক (সুরা ফুরকানঃ আয়াত ১৩-১৪) কারণ আমাদের মৃত্যু একবারই হবে, তারপর মৃত্যুর মৃত্যু ঘটবে, সুতরাং যতই মৃত্যুকে কামনা করা হোক জীবনের অবসান আর কষ্টের পরিসমাপ্তি টেনে আনতে পারবেনা
সেদিন আরেকটি বিষয়ে দলিল পেলাম যেটি বহুদিন যাবত খুঁজছিলাম পরিচিত জনদের মাঝে অনেকে বলে থাকেন, আরে একটাই তো জীবন, আগে ফূর্তিফার্তি করে নেই, তারপর দরকার পড়লে কিছুদিন দোজখে থেকে নেব শেষপর্যন্ত সবাই তো বেহেস্তে যাবেই আমি বিস্ফারিত নেত্রে তাকিয়ে থাকি কারণ কিছুদিন তো দূরে থাক, আমি এর চেহারা পর্যন্ত দেখার সাহস রাখিনা একবার ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে স্টাডি ট্যুরে গেছিলাম যে চুল্লীতে পাথর গলিয়ে সিমেন্টের জন্য চূর্ণ করা হয় তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি গরমে, চুল্লীর দাউ দাউ শব্দে কানে শুনতে পাচ্ছিলাম না কিছুই আর চৌধুরী গোলাম মাওলা ভাই, কবি মানু্- বেচারা কেঁদেই অস্থির যে সাধারন মোমবাতির আগুনে হাত পুড়ে গেলে, জীবন অর্থহীন মনে হয়, আর সেই চামড়া যখন বেয়াল্লিশ গজ মোটা করে দোজখের আগুনে পুড়তে দেয়া হবে, যতই পুড়বে ততই পরতের পর পরত চামড়া গজাতে থাকবে অবিরত, তখন আমরা কি করব? এই মহাসাহসীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলছেন, তারা বলেঃ আগুন আমাদের কখনও স্পর্শ করবে না; গণাগনতি কয়েকদিন ছাড়া বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না, না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ হাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখের অধিবাসী তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে (সুরা বাক্কারাঃ আয়াত ৮০-৮১)
সুতরাং, জেনে নেয়া জরুরী কি ধরণের কাজগুলো আমাদের এই নিকৃষ্ট স্থানে ল্যান্ড করাতে পারে
আল্লাহ বলছেন, যারা আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলবে এবং তা থেকে অহংকার করবে, তারাই দোযখী এবং তথায় চিরকাল থাকবে (সুরা আরাফঃ আয়াত ৩৬)
তাদের সাথে থাকবে যাদের তারা অনুসরন করত এবং যারা তাদের অনুসরন করত, তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে (সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত ৯৮-৯৯)
এর মধ্যে থাকবে অ্যামেরিকান আইডল, ইন্ডিয়ান আইডল, ভন্ডপীর আইডলসহ যাবতীয় আইডল
অতঃপর আল্লাহ বলছেন, যে কেউ আল্লাহ রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন সে সেখানে চিরকাল থাকবে তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি (সুরা নিসাঃ আয়াত ১৪)
অর্থাৎ শুধু আল্লাহকে বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয় বরং তিনি যে সীমারেখাগুলো দিয়ে দিয়েছেন সেগুলো তাঁর নির্ধারিত রাসূলের মাধ্যমে প্রদর্শিত উপায়েই অনুসরন করতে হবে, নিজের খেয়ালখুশীকে আল্লাহর অনুসরন বলে চালিয়ে দিলেই চলবে না
এরপর রয়েছে খুন, রাহাজানি, অবৈধ সম্পর্ক, পরের সম্পদ আত্মসাত, মিথ্যা বলা, বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া থেকে শুরু করে অন্যায় কাজের তাবত তালিকা, এখানে একনজরে দেখা যায়-
এরপর একটি বিশেষ ক্যাটাগরীর কথা বলা হয়েছে যাতে আমিসহ অধিকাংশ মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন মানুষ তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ (সুরা আরাফঃ আয়াত ১৭৯)
সত্যিই তো আমরা বিবেক থাকা সত্ত্বেও বিবেচনা না করেই অন্যের কথা মেনে নেই, আলমারির ওপর থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নামিয়ে একটু পড়েও দেখিনা যে, এতে কি লেখা আছে, যদিও জানি জীবন ক্যাসেটের মত রিওয়াইন্ড করে সংশোধন করার সুযোগ নেই; সত্যিই তো আমরা আল্লাহর সৃষ্টির নৈপুণ্য নিজ চোখে দেখেও স্রষ্টার পরিবর্তে সৃষ্টির প্রশংসা নিয়ে মশগুল থাকি, প্রতিদিন এতকিছু চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে, এত মানুষ মরে যাচ্ছে তবু আমাদের বোধোদয় হয়না, আমাদেরও যাবার সময় হয়ে এলো, কি নিয়ে যাব আমরা; সত্যিই তো আমরা আজান শুনেও বিছানায় শুয়ে থাকি, মিথ্যা কথা শুনেও প্রতিবাদ করিনা, একবারও ভাবিনা এর জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে; সত্যিই তো আমাদের মুভি দেখে আর গান শুনে কেটে যায় বেলা, অথচ সামান্য গা ম্যাজম্যাজ করার উসিলায় আমরা নামায ছেড়ে দেই, গৃহিণীরা ঘরকে বেহেস্ত বানাতে আর বত্রিশ রকম তরকারী রান্না করতে সমস্ত সময় আর এনার্জি খরচ করে নামায পড়ার বা কুরআন পড়ার আর সময় করতে পারেন না! এই শৈথিল্যের তালিকার শেষ নেই তাই চিন্তা করছি আমার কি হবে কারণ আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না (সুরা ত্বা হাঃ আয়াত ৭৪)
জাহান্নাম বিষয়ে দুটি উদাহরণ আমাকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছে এর একটি হলো, এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা) আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি- যাতে কিতাবীরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটাতো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়(সুরা মুদ্দাসসিরঃ আয়াত ৩০-৩১)
এই বাহিনীর ব্যাপারে বিভিন্ন স্থানে যা বলা হয়েছে তাতে বোঝা যায় এঁরা গাণিতিক নিয়মের মতই কঠোর এবং অনড়, কোন প্রকার কাকুতি মিনতি ঘুষ বা প্রতিশ্রুতি তাঁদের নিজ দায়িত্ব পালন থেকে ন্যূনতম পরিমাণ বিচ্যূত করতে পারেনা
অন্য যে বিষয়টি আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে তা হলো সুরা হুমাজাহ এই ছোট্ট সুরাটি আমরা প্রায়ই নামাজে পড়ে থাকি, অথচ এতে যে কি ভয়ানক সাবধান বানী দেয়া হয়েছে অনেকেই হয়ত অর্থ পড়ে দেখিনা তিনটি বিশেষ কারণে- কোন ব্যাক্তির অনুপস্থিতিতে তার বদনাম করা, কোন ব্যাক্তিকে সামনা-সামনি কথা দিয়ে কষ্ট দেয়া এবং অর্থলিপ্সা- আল্লাহ হুতামা নামক বিশেষ আগুনের শাস্তি বরাদ্দ করেছেন যার ব্যাপারে তিনি নিজেই বলছেন, আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি? এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, লম্বা লম্বা খুঁটিতে (সুরা হুমাজাহঃ আয়াত -)
কারো পেছনে তার বদনাম করলে সে ব্যাক্তি আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পায়না, কাউকে সামনাসামনি কড়া কথা বললে সে সাঙ্ঘাতিক কষ্ট পায়, নিজের ধনসম্পদ প্রদর্শন করেও আমরা দরিদ্র বা অসমর্থ ব্যাক্তির মনোঃকষ্টের কারণ সৃষ্টি করে থাকি আল্লাহর বিচার কত নিখুঁত যে কাউকে মনে কষ্ট দেয়ার শাস্তি হিসেবে তিনি এমন আগুন নির্ধারণ করেছেন যা কেবল শরীরকেই স্পর্শ করবেনা বরং মনের ভেতরেও দাউ দাউ করে আগুন জ্বালিয়ে দেবে যেভাবে সে কষ্ট দিয়েছিল অন্যকে যখন তার ক্ষমতা ছিল তবু আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় গীবত করে বা শুনে কাটাই, কাউকে একটা কড়া কথা বলতে পারলে নিজেদের বীর বাহাদুর মনে করি, এক কথার উত্তরে পাঁচকথা শুনিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি পাই, ‘আমিই বা কম যাই কিসে?’ সময়গুলোতে আমরা কি একটা মূহূর্ত ব্যায় করে হিসেব করে দেখতে পারিনা এই সামান্য আত্মতুষ্টি এবং চিরন্তন জীবনের শাস্তির মাঝে কাটাকুটি করে আমরা কতটুকু লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম? এই আয়াতগুলো রাসূল (সা) এর হাদীস অনুযায়ী নারীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই কাজগুলো আমাদের দ্বারাই বেশি সংঘটিত হয়ে থাকে
সবশেষে সুরা ক্কাফে আল্লাহ বলছেন, যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি?’ (সুরা ক্কাফঃ আয়াত ৩০) এতটুকু শুনেই আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায়, ঘুম উড়ে যায়, খাওয়া-দাওয়া গলা দিয়ে নামতে চায়না, বোতলে বোতলে পানি পান করেও গলা ভেজেনা

জাহান্নাম: জাহান্নাম শব্দটি আরবি, অবশ্য পবিত্র কুরআনে এটাকেনারবলেও উল্লেখ করা হয়েছে ফার্সি ভাষাই যাকে বলে দোযখ সবগুলিরই আভিধানিক অর্থ দুঃখময় স্থান আর পরিভাষাই শেষ বিচারের দিন যারা অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য যে স্থান আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন তাকেই জাহান্নাম বলে

*মহান আল্লাহ আল কুরআনে বলেছেন- নিশ্চয় জাহান্নাম সীমালঙ্ঘন কারীদের আশ্রয়স্থল রূপে প্রতীক্ষাই থাকবে সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে সেখানে তারা ফুটন্ত পানি পুঁজ ছাড়া ঠাণ্ডা এবং কোন পানীয় আস্বাদন করবে না সেটাই তাদের উপযুক্ত প্রতিফল তারা কখনো হিসেবের আশা করতো না এবং তারা আমার আয়াত সমূহকে পুরোপুরি মিথ্যারোপ করত (সুরা-নাবা,২১-২৮)

*মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের পৃথিবীস্থ আগুন তাপের দিক দিয়ে জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর নবি! কেন, আগুনই কি যথেষ্ট ছিল না? জবাবে নবীজি (সাঃ) বললেন, দুনিয়ার আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুণকে (পোড়ানোর শক্তির দিক দিয়ে) উনসত্তর ভাগে বৃদ্ধি করা হয়েছে এর প্রতিটি ভাগই আলাদা ভাবে দুনিয়ার আগুনের সমতুল্য (বুখারি,মুসলিম)

*প্রকৃত পক্ষে- আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধ চারণকারীরাই অনন্ত কাল ধরে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে তাছাড়া জাহান্নামে পাপীদের অবস্থা এমন হবে যে, সেখানে তারা মরবেও না বাঁচবেও না মনে রাখবেন, জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে সেদিন কেও যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে ( সবকিছু) এবং এর সমান বস্তুও যদি এর সাথে দিতে চায় তবুও তা তাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না তায় আসুন, হে আদম সন্তানেরা- কুরআন সুন্নাহর পথ অনুসরণ করে জাহান্নামের পথ ছেড়ে জান্নাতের পথে পা বাড়াই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন