সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫

জাহান্নামের বর্ণনা


জাহান্নামের বর্ণনা



বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্তুর ন্যায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে যে কারণে জাহান্নামের নাম শুনে অন্তরসমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না, চক্ষুসমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না যা সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন সতর্কবাণী আমরা শুনিনি অথবা আমাদের অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর কঠিন হয়ে গেছে কোরআন সুন্নাহর আলোকে জাহান্নামের কিছু ভয়াবহতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে:

জাহান্নামীরা অবরুদ্ধ অগ্নিতে পরিবেষ্টিত হবেঃ জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে নাতারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে” [সূরা বালাদ: ১৯-২০]
জাহান্নামের ইন্ধনঃ জাহান্নামের ইন্ধন হবে মানুষ পাথর [সূরা আত-তাহরীম: ]
জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের বৈশিষ্ট্যঃ জাহান্নামে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, তাদেরকে আল্লাহ যা আদেশ করেন তারা তাই করে, কখনো আদেশ অমান্য করে না [সূরা আত-তাহরীম: ]
জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যাঃ জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন [সূরা মুদ্দাছছির: ৩০]
জাহান্নামবাসীদের করুণ অবস্থাঃ জাহান্নামবাসীরা মরবেও না, আবার জীবত অবস্থায়ও থাকবে না [সূরা মুদ্দাছছির: ২৮]
সর্বদিক হতে জাহান্নামীর নিকট আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে’ [সূরা ইবরাহীম: ১৬-১৭]
আল্লাহ তাআলা বলেন, জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামের অগ্নি ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে [সূরা আর-রাহমান: ৪৪]
জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে, তাঁরা তা টেনে আনবে [মুসলিমঃ ২৮৪২, মিশকাতঃ ৫৪২২]
জাহান্নামের গভীরতাঃ একটি বড় পাথর খন্ডকে যদি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবে না [মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ৩৫২৮৪, আল-জামেঃ ৫২১৪]
জাহান্নামের আবহাওয়াঃ জাহান্নামীরা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচন্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছাঁয়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়’ [সূরা ওয়াকিআহঃ ৪১-৪৪]
জাহান্নামের আগুনের প্রখরতাঃ দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র অর্থাৎ দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে [বুখারীঃ ৩২৬৫, মিশকাতঃ ৫৪২১]
জাহান্নামের আগুনের তাপ দিনে দিনে শুধু বৃদ্ধিই পাবেঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমি তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব’ [সূরা নাবা: ৩০], আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘যখনই উহা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব [সূরা বানী ইসরাঈল: ৯৭]
জাহান্নামীদের দেহের আকৃতিঃ জাহান্নামীদের দুকাধের মাঝের দূরত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণপথের সমান হবে [বুখারীঃ ৬৫৫১]
জাহান্নামীদের দাঁতের আকৃতি এবং শরীরের চামড়ার পুরুত্তঃ জাহান্নামীদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং শরীরের চামড়া হবে তিন দিনের সফরের দূরত্ব পরিমাণ মোটা [মুসলিমঃ ৭৩৬৪, মিশকাতঃ ৫৪২৮]
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে কাফিরের শরীরের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ হাত মোটা, দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং জাহান্নামে তার বসার স্থান হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধান পরিমাণ [তিরমিযীঃ ২৫৭৭, মিশকাতঃ ৫৪৩১]
জাহান্নামীদের বীভৎস চেহারাঃঅগ্নি তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তথায় থাকবে বীভৎস চেহারায়’ [সূরা মুমিনুন: ১০৪],
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’! [সূরা আহযাব: ৬৬]

আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার আমিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন