গীবতকারী ও শ্রবণকারীর রক্ষা নেই
নাজিম উদ্দিন খান, স্টাফ
করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ
দোষারোপ করা,
কুৎসা রটনা,
পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কারো
অনুপস্থিতিতে তার
দোষগুলো অন্যেও সামনে তুলে
ধরা। ইসলামি শরিয়তে গীবত হারাম
ও কবিরা
গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে
বেড়ায় তাদের
জন্য ইসলামে ধবংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। (মুসলিম)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ
করেছেন, আর
তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে
বেড়াবে না’। (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত-১২)
গীবতের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম। সাহাবি আবু
হুরায়রা (রা)
থেকে বর্ণিত একটি হাদিস
থেকে জানা
যায়, হজরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি
জান গীবত
কাকে বলে?
সাহাবিরা বললেন,
আল্লাহ ও
তার রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন। তিনি
বলেন, তোমার
কোনো ভাই
(দীনি) সম্পর্কে এমন কথা
বলা, যা
সে অপছন্দ করে, তাই
গীবত। সাহাবায়ে কেরাম
জিজ্ঞেস করলেন,
হে আল্লাহর রাসুল, আমি
যে দোষের
কথা বলি
সেটা যদি
আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে
তাহলেও কি
গীবত হবে?
উত্তরে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি
যে দোষের
কথা বল,
তা যদি
তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে
তবে তুমি
অবশ্যই গীবত
করলে আর
তুমি যা
বলছো তা
যদি তার
মধ্যে না
থাকে তবে
তুমি তার
ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো। (মুসলিম)
অনেকে ভাবতে
পারেন আমিতো
গীবত করি
না। অন্যে বলে
আমি শুধু
শুনি। না, তাদেরও রক্ষা নেই। কারণ
তারা গীবতকারীকে সাহায্য করছে
এই পাপ
কাজ করতে। গীবতকারী গীবত করার
জন্য যদি
কাউকে না
পায় তাহলে
সে আর
গীবত করতে
পারবে না। আর
তাই গীবত
শ্রবণকারীদের জন্যও
রয়েছে আল্লাহর হুকুম। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা
যেমন নিষেধ,
তেমনি গীবত
শোনাও নিষেধ। যে
গীবত শোনে
সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিস
শরিফে আছে,
যখন কেউ
আপনার সঙ্গে
বসে অন্যের গীবত করে
তখন তাকে
থামতে বলুন,
আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ
করিয়ে দিয়ে
সাবধান করুন। আর
তাতেও যদি
কাজ না
হয় তবে
সেখান থেকে
সরে আসুন। কোনোভাবেই গীবত শোনা
যাবে না।
গীবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে
মহানবী হজরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
হজরত আনাস
(রা) থেকে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন
আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া
হলো, তখন
আমি তামার
নখ বিশিষ্ট একদল লোকের
পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের
মুখমণ্ডল ও
বক্ষদেশে আঘাত
করে ক্ষত-বিক্ষত করছিলো। আমি
জিজ্ঞেস করলাম,
হে জিব্রাইল! এরা কারা?
জিব্রাইল(আ)
বললেন, এরা
দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ
করতো এবং
তাদের মান-সম্মান নষ্ট
করতো। অর্থাৎ তারা
মানুষের গীবত
ও চোগলখোরী করতো। (আবু দাউদ)
আয়েশা (রা)
থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে যে
ব্যক্তি তার
ভাইয়ের গোশত
ভক্ষণ করবে
অর্থাৎ গীবত
করবে, কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত
অবস্থায় উপস্থিত করা হবে
এবং বলা
হবে তুমি
মৃত অবস্থায় তার গোশত
ভক্ষণ কর
যেমনভাবে জীবতাবস্থায় তার গোশত
ভক্ষণ করতে। অতঃপর
সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে
তা ভক্ষণ
করবে। (বুখারী)
সুতরাং অন্যের সমালোচনায় মত্ত
না থেকে
নিজের দোষগুলো খুঁজে বের
করি আর
আল্লাহর কাছে
সাহায্য চাই
যাতে করে
নিজের দোষগুলো কাটিয়ে উঠতে
পারি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে তার
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে
আল্লাহর রাসুল
গীবত কি
জেনার চেয়েও
মারাত্মক? জবাবে
তিনি বললেন,
হ্যাঁ, কারণ
কোনো ব্যক্তি জেনার পর
(বিশুদ্ধ) তওবা
করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার
গীবত করা
হয়েছে, তিনি
মাফ না
করলে আল্লাহ মাফ করবেন
না। (মুসলিম)
গীবতের কাফফারা হলো, যার
সম্পর্কে গীবত
করা হয়েছে
তার জন্য
আল্লাহর কাছে
বেশি বেশি
করে দোয়া
করা। হাদিস শরিফে
বর্ণিত আছে,
গীবতের কাফফারা হলো, তুমি
যার গীবত
করেছো, তার
জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি
এভাবে করবে,
হে আল্লাহ তুমি আমার
ও তার
গুনাহ মাফ
করে দাও। (বায়হাকি)
---------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন